ফুল ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন ছবি আঁকতে আর মানুষের সঙ্গে মিশতে। ইশরাত আখন্দ। বন্ধু বা কাছের মানুষেরা তাঁকে ডাকতেন নীলা নামে। ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। সেখানে তিনি সেদিন গিয়েছিলেন ছয় ইতালীয় অতিথিকে নিয়ে। তাঁদের সবাই এখন স্মৃতি।
ইশরাত মানবসম্পদ বিভাগে পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন জেডএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনাল এফজেডকোতে। সবাইকে আপন করে নেওয়ার দারুণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। ইশরাতের মামা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী চঞ্চল খান বলেন, ‘চিত্রকলায় ছিল বিশেষ আগ্রহ। নিজেও ভালো ছবি আঁকত। ফুল-পাখি ভালোবাসা মেয়েটাকে এভাবে চলে যেতে হবে?’
ইশরাতের ফেসবুকের ওয়ালে ফুলের ছবি। পাখির ছবি। ২১ জুন ইশরাতের উচ্ছ্বাস ফেসবুকে—তাঁর অফিসঘরের ভেতর টবে কামিনী ফুল ফুটেছে। কৃত্রিম এয়ার ফ্রেশনারের বদলে অফিসঘরে তাঁর কামিনীর সুবাস। ১৮ মার্চ ইশরাত ফেসবুকে দিয়েছিলেন বেলিফুলের ছবি। লিখেছেন: আই অ্যাম হ্যাপি টুডে। ইটস অসাম টু হ্যাভ জেসমিন এভরি হয়্যার ইন দ্য স্ট্রিট। ওয়ান অব দ্য বেস্ট পার্ট অব লিভিং ইন ঢাকা!
রোটারি বাংলাদেশের সাবেক ডিসট্রিক্ট গভর্নর সাফিনা রহমানের সঙ্গে ইশরাতের পরিচয় ২০০৪ সালে। বয়সের পার্থক্য থাকলেও দুজনের বন্ধু হতে সময় লাগেনি। ২ জুলাই সাফিনার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল ইশরাতের। সাফিনা রহমান বলেন, ‘প্রতি ঈদেই আমি ওর জন্য এবং সে আমার জন্য উপহার কিনে। ২ তারিখ বিকেলে তার আমার কাছে আসার কথা ছিল উপহার নিতে। আমি তার জন্য একটা চাঁপা সাদা আরেকটা গোলাপি রঙের কোটা শাড়ি কিনে রেখেছি।...’
দেশ নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস ছিল ইশরাতের। কোথায় ভালো ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে, কোথায় ভালো সংগীত বা নাটক হবে—সব তথ্যই ইশরাতের জানা থাকত। তাঁর বন্ধু ফেরদৌস বাপ্পি বলেন, ‘ইশরাত দেশ নিয়ে আনেক আশাবাদী ছিল। ঢাকা আর্ট সেন্টারের পরিচালক ছিল কিছুদিন।’ ঘুরতে ভালোবাসতেন ইশরাত। ঈদের ছুটিতে ৩ জুলাই তাঁর শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইশরাত এখন চিরনিদ্রায় শায়িত।
বেইলি রোড, শিল্পকলা একাডেমি, চারুকলার আর্ট গ্যালারিতে আর দেখা যাবে না ইশরাতকে। ফুল দেখে আর ইশরাত বলবেন না ‘আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি টুডে’। অথবা চঞ্চল খানকে আর কেউ বলবেন না, মামা, ওই গানটা শোনাও তো—‘আমি কান পেতে রই...’।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/908194


No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.